হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইবনে আব্বাস (রা)-এর জীবনী : মুফাসসিরকুল শিরোমণি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হাদীসশাস্ত্রেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার পরিচিতি নিম্নরূপ
১. নাম ও পরিচয়: তাঁর নাম আবদুল্লাহ, উপনাম আবুল আব্বাস। পিতার নাম আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব। মাতার নাম লুবাবা বিনতে হারেস। তিনি রাসূল (স)-এর চাচাতো ভাই এবং একজন বিখ্যাত সাহাবী।
২.বংশ পরিক্রমা: তাঁর বংশধারা হলো আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ ।
৩. জন্ম: মহানবী (স)-এর মদিনায় হিজরতের তিন বছর পূর্বে মক্কা নগরীর শিয়াবে আবি তালিব নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরই তাকে রাসূল (স)-এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি শিশু আবদুল্লাহর মুখে একটু থুতু দিয়ে তাহনীক করেন এবং এ বলে দোয়া করেন في الدين وعلمه التاويل ইস্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল তেরো বছর মাত্র।
৪. ইসলামগ্রহণ: তাঁর মাতা লুবাবা বিনতে হারেস (রা) হিজরতের পূর্বেই ইসলাম করেছেন বিধায় হযরত আবদুল্লাহ (রা)-কে আশৈশব মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয়।
৫. গুনাবলি: তিনি ছিলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং একজন বিখ্যাত আলেম। জ্ঞানবিজ্ঞান ও ফিকহশাস্ত্রে তিনি অসীম পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাঁর কাছ অর্থাৎ, আবদুল্লাহ থেকে খলিফা হযরত ওমর ও ওসমান (রা) বিভিন্ন সময় পরামর্শ গ্রহণ করতেন। এমনকি তাঁর সম্পর্কে ওমর (রা) বলতেন ইবনে আব্বাস (রা) তরুণ প্রবীণ। তিনি ছিলেন এ তথ্য মুফাসসিরগণের প্রধান। তাঁর লিখিত তাফসীরগ্রন্থ … জগদ্বিখ্যাত।
৬. রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন : হযরত আলী (রা)-এর শাসনামলে তিনি বসরার গভর্নর ছিলেন। তিনি ৩৭ ও ৩৮ হিজরী সনে সংঘটিত যথাক্রমে জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনে হযরত আলী (রা)-এর পক্ষে একটি অংশের সেনাপতি ছিলেন এবং সিফফীনের যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
৭. শারীরিক গঠন: তিনি ছিলেন গৌর বর্ণের এবং সামান্য মোটা ও দীর্ঘকায়। তাঁর চেহারা ছিল সুন্দর ও লাবণ্যময় এবং মাথায় ছিল যথেষ্ট চুল। তিনি চুলে সর্বদা মেহেদী লাগাতেন।
৮. হাদীস বর্ণনা : সর্বমোট সাতজন সাহাবী রাসূল (স) থেকে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) অন্যতম। তিনি ১৬৬০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও মুসলিমে যৌথভাবে ৯৫টি, এককভাবে বুখারীতে ১২০টি এবং মুসলিমে ৪৯টি স্থান পেয়েছে।
৯. জ্ঞানের গভীরতা : সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ইলমে ফিকহ ও হেকমতসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বিশেষ ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন ছিলেন। যার জন্য তিনি ‘রঈসুল মুফাসসিরীন তথা মুফাসসির সম্রাট উপাধিতে ভূষিত হন। আর জ্ঞানের গভীরতার কারণেই তাঁকে “হিবরুল উম্মাহ’ তথা উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক তত্ত্বজ্ঞানী বলা হয়। প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মাসরূক (র) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-কে দেখে মনে মনে বলতাম, তিনি সর্বাপেক্ষা সুন্দর ব্যক্তি। আর কথাবার্তা বলার সময় আমি ধারণা করতাম, বাক্যালঙ্কারে তিনি সবচেয়ে উচ্চাঙ্গের। আর হাদীস বর্ণনার সময় ভাবতাম তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম ও জ্ঞানী।
১০. হযরত ওমর (রা)-এর প্রিয়ভাজন : তিনি হযরত ওমর (রা)-এর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। হযরত ওমর (রা) যখনই কোনো ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবীগণের পরামর্শসভা ডাকতেন, সেখানে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-কেও শরীক করতেন।
১১. জিবরাঈলের দর্শন লাভ : তিনি স্বচক্ষে হযরত জিবরাঈল (আ)-কে দু’বার দেখেছেন।
১২. তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা : বহুসংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৩. ইন্তেকাল : তিনি জীবনের শেষদিকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং হিজরী ৬৮ সনে ৭১ বছর বয়সে ইবনে যোবায়েরের শাসনামলে তায়েফে ইন্তেকাল করেন। মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন।
আরো জানুন: