ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি তা জানতে চাচ্ছেন? অনলাইনে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ও বাংলাদেশে কোন কাজের চাহিদা বেশি তা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
বর্তমান সময়ে সকলের কাছে ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় একটি প্রফেশন। আমাদের দেশ সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় পেশায় পরিণত হয়েছে। তবে নতুন অবস্থায় আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আসবেন।
তখন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন হল ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন আমাদের মূল আলোচনা শুরু করি।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং শব্দের বাংলা অর্থ হলো মুক্ত পেশা বা স্বাধীন পেশা। সহজ ভাবে বলতে গেলে, ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। যে সকল ব্যক্তিরা ফ্রিল্যান্সিং কাজের সাথে যুক্ত থাকে। তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়।
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি?
ফ্রিল্যান্সিং এ বিভিন্ন রকমের সেক্টর হয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রত্যেকটা সেক্টরের কাজের চাহিদা বেশি না। দেখা গিয়েছে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে রয়েছে সে সকল সেক্টরে কাজের চাহিদা অনেক কম। আবার এমন কিছু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজ রয়েছে। সেসব কাজের চাহিদা মার্কেটপ্লেসে অনেক বেশি।
তাই অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে কোন কাজের চাহিদা বেশি, সে কাজগুলো আপনাকে শিখতে হবে। কারণ যে কাজের কোন চাহিদা নেই, সে কাজের প্রতি দক্ষতা অর্জন করে কোন লাভ হবে না। চলুন ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি তা দেখে নেই।
১. গ্রাফিক্স ডিজাইন
২. ডিজিটাল মার্কেটিং
৩. ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট
৪. কন্টেন্ট রাইটিং
৫. ভিডিও এডিটিং
১. গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের সব থেকে জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন সেক্টর হল গ্রাফিক্স ডিজাইন। যেকোনো ধরনের অনলাইন বা অফলাইন প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্যই লোগো ও ব্যানার ডিজাইন করতে হবে। এ কারণে গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের চাহিদা মার্কেটপ্লেসে একটু বেশি।
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কিছু কাজ যেমন লোগো ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, কভার পেজ, টি শার্ট ডিজাইন ও ফেসবুক কভার পেজ ডিজাইন ইত্যাদি। মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে এই কাজগুলো আপনাকে করতে হবে।
যে সকল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে। সকল মার্কেটপ্লেসে দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার প্রত্যেক মাসে হাজার হাজার ডলার উপার্জন করছে।
তবে ডলার ইনকাম করার আগে, আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ শিখতে হবে। ভালোভাবে কাজ শেখার পরেই গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
বর্তমান সকল ধরনের বিজনেস অনলাইন মুখী। দেখা যায় ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোগো এবং কভার পেজের দরকার হয়। তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক অবশ্যই একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হায়ার করবে।ভবিষ্যতে এ সকল কাজের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। তাই আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাহলে ইনশাল্লাহ এই সেক্টর থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
২. ডিজিটাল মার্কেটিং
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আরেকটি জনপ্রিয় পেশা হল ডিজিটাল মার্কেটিং। বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসা হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটা করা অনেক সহজ। এছাড়াও অনলাইনে যেকোনো ধরনের পণ্য বা প্রোডাক্ট সহজেই প্রচার করা যায়।
তাই আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন। তাহলে অনলাইনে যেকোনো প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। অর্থাৎ, যেকোনো ধরনের পণ্য আপনি অনলাইনে প্রচার ও প্রসার করতে পারবেন।
যেহেতু বর্তমানে সব ধরনের ব্যবসার বিজ্ঞাপন অনলাইনে হয়ে থাকে। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং ভালোভাবে শিখতে পারলে। আপনিও বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন অনলাইনে দিতে পারবেন। তখন ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে আপনার টাকা ইনকাম হবে।
ইন্টারন্যাশনাল বড় বড় যে সকল ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে। সে ওয়েবসাইট গুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং কাজের চাহিদা অন্যান্য কাজের চেয়ে একটু বেশি। তাই আপনিও যদি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ভালো একটি অবস্থান তৈরি করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সর্বোত্তম।
৩. ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট
অনলাইনে ব্যবসা, ব্লগিং, ই- কমার্স ওয়েবসাইট ও নিউজ এর জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইটের দরকার হয়। বিশেষ করে যারা অনলাইনে ব্যবসা করবে বা অনলাইনে যদি কোন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করে। তাহলে সর্বপ্রথম কাজ হল ওয়েবসাইট তৈরি করা।
বর্তমান সময়ে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট কাজের চাহিদা অনেক বেশি। কারণ দিন দিন মানুষের ওয়েবসাইটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ওয়েবসাইট ছাড়া অনলাইন ব্যবসা, ব্লগিং ও নিউজ কোনটাই সম্ভব না। আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের চাহিদা কেমন।
একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ওয়েব ডেভলপার মাসে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা আয় করে। এমন অনেক ওয়েব ডিজাইনার এবং ডেভেলপার আছে যাদের মাসিক আয় লাখ টাকার ওপরে। তবে ভালো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে। তাহলে আপনিও মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।
৪. কনটেন্ট রাইটিং
আপনার যদি লেখালেখি করতে ভালো লাগে, তাহলে কনটেন্ট রাইটিং পেশা আপনার জন্য। একজন অভিজ্ঞ কনটেন্ট রাইটারের চাহিদা অনলাইনে সব সময় বেশি থাকে। একটা সময় সাধারণত পত্রপত্রিকার জন্য কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ দেওয়া হতো।
তবে বর্তমান সময়ে এখন আর কেউ পত্রিকার জন্য কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ দেয় না। বর্তমানে এখন বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ওয়েবসাইট ও ব্লগিং করার জন্য কন্টেন্ট রাইটার দরকার হয়। আপনি যদি ভালো মানের একজন কন্টিনেন্ট রাইটার হতে পারেন। তাহলে মাসে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা অনায়াসে আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও যদি ইংরেজি ভাষায় কনটেন্ট লিখতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কারণ ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ইংলিশ কনটেন্ট রাইটারের চাহিদা ও মূল্য দুটোই অনেক বেশি।
৫. ভিডিও এডিটিং
ভিডিও কোন টিউটোরিয়াল, প্রোডাক্ট এর এডস ও যেকোনো সুন্দর ভিডিও তৈরি করতে ভিডিও এডিটিং করার দরকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের জন্য অভিজ্ঞ ভিডিও এডিটর দরকার পড়ে।
বর্তমানে সময়ে ভিডিও এডিটিং কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ আমরা সুন্দর ও সাবলীল ভিডিওগুলো দেখতে খুবই পছন্দ করি। তাই আপনি যত সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন। আপনার ভিডিও গুলো মানুষ তত বেশি দেখতে চাইবে।
তাই ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। একজন দক্ষ ভিডিও এডিটর মাসে ৫০/৭০ হাজার টাকা আয় করছে। তাই আপনি যদি মাসে ৫০০০০ টাকা আয় করতে চান। তাহলে আজ থেকেই ভিডিও এডিটিং শিখতে থাকুন।
এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ও Virtual assistant কাজেও বেশ চাহিদা আছে। তবে উপরে উল্লেখিত ৫ টি কাজ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সবথেকে বেশি চাহিদাসম্পন্ন।
শেষ পর্যন্ত
এই ছিল আজকে ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি, আজকের আলোচনা থেকে আপনি বুঝতে পেরেছেন কোন সেক্টরে কাজ শিখতে তাড়াতাড়ি ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হওয়া যাবে।
তাই ঘরে বসে না, আপনার পছন্দ অনুযায়ী সেক্টরে কাজ শুরু করে দিন। তাহলে দেখবেন অল্প দিনের মধ্যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। সেই সাথে টাকা ইনকামও হবে।