মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের নাম মনে রাখা কৌশল: “কানা বংশের নারায়ণ বিপদকে বিজয় করে তন্দ্রা গেলো”
বর্ণানা:
কানা:- কানাহরি দত্ত,
বংশ:- দ্বিজ বংশীজাত,
নারায়ণ:- নারায়ণ দেব ,
বিপদ:- বিপ্রদাস পিপিলাই,
কে:- কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ,
বিজয়:- বিজয় গুপ্ত,
তন্দ্র:- তন্দ্র বিভূতি।

নিম্নে মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো: –

১. কানাহরি দত্ত :
* মনসামঙ্গল কাব্যের প্রথম/আদি কবি কানাহরি দত্ত।
* কানাহরি দত্ত পূর্ববঙ্গের কবি ছিলেন।
* কানাহরি দত্তের কোন প্রকারের কাব্য পাওয়া যায়নি।
* কানাহরি দত্তের দৈহিক বৈশিষ্ট্য: তিনি কানা ও খোড়া ছিলেন।
* তার কোন প্রকারের কাব্য পাওয়া যায়নি তারপরও তিনি প্রথম বা আদি কবি হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি বিজয় গুপ্ত এর কটু মন্তব্য থেকে, মন্তব্যটি:
“প্রথমে রচিল গীত না জানে বৃত্তান্ত,
মূর্খ রচিল গীত কানাহরি দাত্ত।”

২. বিজয় গুপ্ত :
*বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
* কবি বিজয় গুপ্ত বরিশাল জেলার ফুল্লশ্রী গ্রামে ( বর্তমান নাম: গৈলা গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন।
* তাঁর ছদ্মনাম ছিলো ‘রঘুনাথ’।
* বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি হওয়ার কারণ তিনিই বাংলা সাহিত্যে প্রথম সন ও তারিখ যুক্ত কাব্য রচনা করেন।
* তার কাব্যের নাম ছিলো ‘পদ্মাপুরাণ’।

৩. নারায়ণ দেব :
* কারো কারো মতে মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি নারায়ণ দেব।
* তিনি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বোর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
* তার পিতার নাম নরসিংহ,
* তার মাতার নাম রুক্সিনী,
* তার উপাধি সুকবি বল্লব (তিনি ভালো কবিতা লিখেন বিধায় তাতে সুকবি বলা হতো। )
* চাঁদ সওদাগর, বেহুলা, লখিন্দরের কাহিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন।
* তাঁর কাব্য এ দেশে এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয়; কাহিনি ও চরিত্র নির্মাণে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তার কাব্যের নামকরণ করেছিলেন ‘পদ্মপুরাণ’। সমস্ত কাহিনিকে তিনি তিনটি খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন।

৪. দ্বিজ বংশীজাত :
* মনসামঙ্গল কাব্যধারার একজন অন্যতম কবি দ্বিজ বংশীদাস।
* তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
* তিনি একাধারে লেখক, গায়ক হিসেবেও দ্বিজ বংশীদাসের বেশ খ্যাতি আছে।
* তিনি সুকণ্ঠে গান গায়তেন বিধায় তাকে সুকণ্ঠ গায়ক বলা হতো, এটি তার উপাধি।
* দ্বিজ বংশীজাত বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিল কবি ‘চন্দ্রাবতী’ এর পিতা ছিলেন।

৫. বিপ্রদাস পিপিলাই :
* তিনি কলকাতার চব্বিশ পরগণার জলোর বাদুড়িয়া গ্রামের কবি ছিলেন।
* বাংলার প্রাচীন জনপদ গৌড়ের সুলতান হুসেন শাহের সময় তিনি এ কাব্যটি রচনা করেন।
* তার কাব্যের নাম ‘মনসাবিজয়’।
* এই কাব্যে মোট নয়টি পালা আছে।
* মঙ্গলকাব্য ধারার সবচেয়ে বড় কাব্য ‘মনসাবিজয়’ ।

৬. কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ :
* তিনি পশ্চিমবঙ্গের কবি। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে তিনি জীবিত ছিলেন।
* তিনি মঙ্গলকাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
* কবির মূল নাম ক্ষেমানন্দ,
* তাঁর উপাধি কেতুকাদাস ( মনসার অপর নাম কেতকা, কবি কেতুকার দাস হিসাবে নিজের নামরে সাথে কেতকাদাস জুড়ে দেন) ।
* কবি ব্যক্তিগত জীবনে দেবী মনসার ভক্ত ছিলেন।
* বেহুলার দুঃখ বর্ণনার করুণরস সৃষ্টিতে তিনি অসাধারণ কবিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
* কবি ক্ষেমানন্দ এর কাব্যের নাম কেতকাপুরাণ।
* মঙ্গলকাব্য ধারায় প্রথম মুদ্রিত কাব্য ছিলো ‘কেতকাপুরাণ’।

** বাইশ কবির মনসামঙ্গল :

বাংলা মঙ্গলকাব্য ধারায় ‘মনসামঙ্গল’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মঙ্গলকাব্য। পাঠকপ্রিয় কাব্য হওয়ার কারণে বিভিন্ন কবির বিভিন্ন কাব্য-অংশ সংগ্রহ ও সংকলন করে একটি ব্যতিক্রম মনসামঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, বাইশ জন কবি মিলে এই কাজটি করায় এ কাব্যের নাম হয়েছে ‘বাইশা মঙ্গল’।

 

2
Created on By BestInfo99

বিভিন্ন পরিক্ষায় মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের নিয়ে আসা প্রশ্নসমূহ। কুইজটি প্রদান করে নিজের দক্ষতা যাচাই করুন।

1 / 3

‘মনসামঙ্গল’ কাব্যের আদিকবি কে?

2 / 3

কোন দেবীর কাহিনী নিয়ে ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য রচিত?

3 / 3

মনসা দেবীকে নিয়ে লেখা বিজয়গুপ্তের মঙ্গলকাব্যের নাম কী?

Your score is

The average score is 67%

0%

মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হার্ড কপি সংগ্রহ করুুন। (পিডিএফ ফাইলে দেওয়া আছে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *