অংশীদারি কারবার (Partnership Business ) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি কারবার (Partnership Business ) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি কারবার (Partnership Business ) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

কয়েক ব্যক্তি দ্বারা গঠিত কারবার প্রতিষ্ঠানকে অংশীদারি কারবার বলে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলে তাকে অংশীদারি কারবার বলে। অর্থাৎ পরিচিত দুই বা ততোধিক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে মূলধন সংগ্র করে কারবার পরিচালনায় নিয়োজিত হলে তাকে অংশীদারি কারবার বলে।

বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে “সকলের দ্বারা অথবা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিবর্গের মধ্যকার চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ককে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।” এ আইনে এ সংগঠনে সর্বনিম্ন ২ জন, সর্বোচ্চ ২০ জন এবং ব্যাংকিং অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য থাকতে পারে। কারবারের মূলনীতি হলো পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস।

অংশীদারি কারবারের প্রকারভেদ:

  1. অংশগ্রহণভিত্তিক ,
  2. মুনাফা গ্রহণভিত্তিক,
  3. দায়ভিত্তিক,
  4. আচরণভিত্তিক।

অংশীদারি কারবার এর  বৈশিষ্ট্য (Properties of Partnership Business )

১. লিখিত বা মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে পারে। সদস্য সংখ্যা ন্যূনতম ২ জন এবং সর্বাধিক ২০ জন হতে পারে এবং ব্যাংক এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন।

২. কারবারের ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস, যা এ কারবারের পূর্বশর্ত। সদস্যদের দায়িত্ব অসীম। দায়ের সীমা নির্দিষ্ট নেই। সংগঠনের দায়, সকলের দায়। সকল সদস্য যুক্তভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অংশীদারদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। নাবালক ও সীমিত অংশীদারের দায় সীমিত হয়ে থাকে। সদস্যদের কেউ মারা গেলে, পাগল হলে, দেউলিয়া হলে কারবার বন্ধ হয়ে যায়।।

৩. অংশীদারগণের চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহকৃত অর্থ হতে মূলধন সংগৃহীত হয়। চুক্তিতে কিছু না থাকলেও অংশীদারগণ সমানুপাতে মূলধন সরবরাহ করে।

৪. সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারগণ লাভ লোকসান বণ্টন করেন।

 

অংশীদারি কারবার এর সুবিধা (Advantage of Partnership Business)

অংশীদারি কারবারের সুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

  • গঠন: এ কারবার গঠন খুবই সহজ। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ কারবার গঠন করতে পারে।
  • মূলধন গঠন: দুই বা ততোধিক ব্যক্তি সহজেই কারবার পরিচালনার জন্য মূলধন গঠন করতে পারে। বেশি মূলধন সংগ্রহ করা যায় বলে বৃহদায়তন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়।
  • সিদ্ধান্তের সঠিকতা: পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।  কারবারে এ সুযোগ পাওয়া যায়।
  • শ্রমবিভাগ: শ্রমবিভাগ কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করে। দুই বা এর অধিক ব্যক্তি থাকায় শ্রমিক সংগ্রহ, শ্রমিকদের পরিচালনা ইত্যাদি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যায়। ফলে এ কারবারে অধিক পরিমাণ উৎপাদন পাওয়া যায়।
  • ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধি: সকল অংশীদারিগণ তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজে নিযুক্ত থাকায় ব্যবসার সুনাম বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পায়। আবার ক্ষতির ভাগও সকল অংশীদারকে বহন করতে হয়।
  • নমনীয়তা: ব্যবসায়ে নিয়োজিত অংশীদারদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনে অংশীদারের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়।
  • করের সুবিধা: সরকারের কর নীতি অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। ফলে এ কারবারে আয়কর ও অন্যান্য করের প্রাপ্ত সুবিধাকরণে এ কারবারের সাফল্য তুলনামূলকভাবে বেশি।

 

অংশীদারি কারবার এর অসুবিধা (Disadvantages of Partnership Business)

 অংশীদারি কারবারের অসুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

  1. সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব: এই কারবারে অংশীদার থাকায় সব সময় মতের মিল হয় না। এজন্য অনেক সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
  2. অসীম দায়িত্ব: সীমাহীন দায়িত্ব পালন এ কারবারের অন্যতম সমস্যা। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখীন হলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান যেকোনো একজন অংশীদারের নিকট হতে সমস্ত টাকা আদায় করতে পারে। এজন্য সেই ব্যক্তিকে প্রায়ই মূলধনসহ স্থায়ী সম্পত্তি হারাতে হয়। অদক্ষ
  3. অংশীদার: অংশীদারদের মধ্যে কেউ অদক্ষ হলে সবাইকে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। আবার অনেক সময় ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ হয়।
  4. বিশ্বাস ও আস্থার অভাব: এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অংশীদারদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার অভাব দেখা দেয়।
  5.  স্থায়িত্ব কম: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মতবিরোধের কারণে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা যায় না। তাছাড়া কেউ মারা গেলে বা দেউলিয়া হলে আইনগতভাবে এ কারবার বন্ধ হয়ে যায়।
  6. সময় সীমা: নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকায় কারবার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলেই সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারে না। ফলে কারবার সম্প্রসারণে বিঘ্ন ঘটে।
  7. হস্তান্তর: সকল অংশীদারই ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের অধিকারী। চুক্তি মোতাবেক অংশীদারগণ ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদন করেন। কোনো অংশীদার তার অংশ অন্য কাউকে হস্তান্তর করতে পারেন না।
  8. স্থায়িত্ব: আইনের মাধ্যমে গঠিত না হলে অংশীদারি সংগঠনের স্থায়িত্বে কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *