ইসলাম ধর্ম

ইসলাম ধর্ম কী? এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ধর্মের প্রবর্তক ও স্তম্ভসমূহ

ইসলাম ধর্ম কী?  এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ধর্মের প্রবর্তক ও ইসলামের রুকন বা স্তম্ভসমূহ

ইসলাম আরবী শব্দ । এর অর্থ শান্তি, আত্মসমর্পণ। যেমন আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

 يا أيها الذين آمنوا ادخلوا في السلم كافة

‘হে ঈমানদারগণ তোমারা শান্তির (ধর্মে) পুরোপুরি প্রবেশ কর।

অন্য দিকে ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ করা। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,
And the strangers said,”We are safe.”Say,”You did not believe,”but say,”We have embraced Islam.”

‘বেদুইন আরববাসী বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আপনি বলুন, তোমরা ঈমান আননি বরং বল আত্মসমর্পণ করেছি।” ইসলাম হল আল্লাহর (বিধানের) নিকট নিজেকে সর্বান্তকরণে সমর্পণ করা। যখন নিজেকে আল্লাহর (বিধানের) নিকট পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্পণ করা যাবে তখন শাস্তির মধ্যে অবস্থান করবে। যখন কোন সমাজের প্রতিটি সদস্য আল্লাহর (বিধানের) নিকট আত্মসমর্পণ করবে তখন গোটা সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। তখন সেই সমাজ হবে শান্তির সমাজ বা ইসলামী মিল্লাত। তাই এ ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম।

 

ইসলাম ধর্ম এর প্রবর্তন: 

পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ইসলাম প্রচার করেছেন। মানুষ ছিল এক জাতি বা উম্মত। পরবর্তিতে উম্মতের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রত্যেক নবীরাসূলকে প্রেরণ করলেন এবং সত্যসহ তাদের সাথে আসমানি কিতাব ও নাযিল করলেন, যাতে তাঁরা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।

আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি মানুষকে ফিত্রতের উপর সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহর ফিত্রত। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর ফিতরত (প্রকৃতি) যে ফিত্রতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। এই ফিত্রত বা স্বভাব ধর্ম নিয়ে প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণ করলেও পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তার ধর্ম পরিবর্তন হয়। মহানবী (সা:) বলেছেন,

كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجستانه

“প্রত্যেক শিশু ফিত্রাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতপর তার পিতা-মাতা তাকে তাদের ইচ্ছা অনুসারে ইয়াহুদী, খ্রীস্টান অথবা অগ্নি উপাসক বানায়।’

আর আল্লাহ তা’আলা এই ফিত্রাত ধর্ম সম্পর্কে বলেন “আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম ইসলাম ধর্ম।”কাজেই মূল ধর্ম এক হলেও এর শাখা অনেক। হযরত ইব্রাহীম (আ:) এই ধর্মের অনুসারীদের মুসলমান নামকরণ করেছেন।
“তোমাদের (ইসলামী) সমাজের পিতা ইব্রাহীম (আ:) তোমাদের মুসলিম নামকরণ করেছেন।’ কাজেই মুসলমানদের ইসলাম ধর্ম যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে বা বিভিন্ন জাতিতে নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

 

ইসলাম ধর্ম এর প্রবর্তক
ইসলাম ধর্ম এর প্রবর্তন হয়েছিল প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ:) এর সময়ে। প্রত্যেক যুগেই পরবর্তী নবীগণের হাতে সংস্কার সাধিত হয়ে ইসলাম ধর্ম আরো উন্নত হয়েছে। মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধর্ম আরো পরিমার্জিত হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে নবী ও রাসূলগণ তা প্রচার করেছেন। কিন্তু সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর সময়ে সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কুরআনের ভাষায়, ‘যেহেতু হযরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন সর্বশেষ এবং বিশ্বনবী, তাঁর সময়ে ধর্ম পূর্ণতা পেয়েছে, পূর্ববর্তী শরীয়ত অপূর্ণতার কারণে বাতিল গণ্য হয়েছে, সেহেতু হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে বলা হয় পরিপূর্ণ দীন ইসলাম ধর্ম এর প্রবর্তক।’

 

হযরত মুহাম্মদ (স) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ গোত্রের অন্তর্গত হাশেমীয় শাখা গোত্রে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (স.) ১২ই রবিউল আউয়াল হযরত আমিনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ্ ইহলোক ত্যাগ করেন। মাতা আমিনা বিনত ওয়াহাব শিশুকে ‘আহমদ’ বলে ডাকতেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিব সপ্তম দিবসে আরবীয় প্রথায় নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ যার অর্থ প্রশংসিত। তার পূর্ণ নাম আবুল কাশেম মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হিশাম।

তৎকালীন রীতি অনুযায়ী মক্কা নগরীর বাইরে বিশুদ্ধ আলো বাতাসে, দূষন মুক্ত পরিবেশে, শুদ্ধ আরবী ভাষা ও কৃষ্টিতে সুদক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য অভিজাত পরিবারগুলো পুরুষ শিশুকে ধাত্রী মাতার দ্বারা প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতো। এরই অংশ হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স.) কে ‘বনি সা’আদ’ গোত্রের বিবি হালিমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছিল। কলেরা মহামারীর ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তাঁকে মাতা আমিনার কাছে প্রত্যার্পণ করা হয়েছিল। ছয় বছরের শিশুকে নিয়ে মাতা আমিনা জনৈক দাসী (মায়মুনা) সহ স্বামীর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ইয়াসরিবে (মদীনার পূর্বনাম) গমন করেন। প্রত্যাবর্তন কালে পথিমধ্যে মাতার ইন্তিকাল হলে দাসীর সঙ্গে মক্কায় এসে দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে যান। আট বছর বয়সে দাদার মৃত্যুতে তিনি চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। শৈশবকাল থেকেই তাঁর মধ্যে অতিমাত্রায় মহামানবীয় গুনাবলী প্রস্ফুটিত হতে থাকে। তিনি আল আমীন বা সত্যবাদী হিসেবে সমাজে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য সম্মানী ব্যক্তি হয়ে উঠেন।

মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিবি খাদীজা তাঁর ব্যবসা তত্ত্বাবধানের জন্য একজন সৎ উদ্যমী ব্যাবস্থাপকের অনুসন্ধানে ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সৎচরিত্রতা, সততা, সত্যবাদিতা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে দ্বিগুন বেতনে হয়রত মুহাম্মদ (স.) কে স্বীয় ব্যবসার ব্যবস্থাপক নিয়োগ করেছিলেন। ব্যবসায়িক সাফল্য ও প্রচুর মুনাফায় সন্তুষ্ট হয়ে বিবি খাদিজা চুক্তির অতিরিক্ত বোনাস দিতে প্রস্তাব করলে হযরত মুহাম্মদ (স.) তা প্রত্যাখ্যান করেন। আর্থিক সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা কর্মোদ্যম ও অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে বিবি খাদিজা ৪০ বছর বয়সে তৃতীয় স্বামী হিসেবে ২৫ বছরের যুবক হযরত মুহাম্মদ (স.) কে বিবাহ করেন।” খাদীজার ইন্তিকালের পর (৬১৯ খ্রিঃ) নবী (স.) আরো ১১ জনকে বিবাহ করেছিলেন। এই বিবাহগুলো ছিলো কুটনৈতিক সম্পর্কের অংশ।

হযরত মুহাম্মদ (স.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে হিরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় হযরত জিব্রাইল (আ:) মারফত ওহী প্রাপ্ত হন এবং নবুয়াতী কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমে গোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। নবুয়াতের পঞ্চম বর্ষে যখন প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন মক্কার কাফেররা মহানবী (স.) এর বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে। অনুসারীরা প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রেক্ষিতে মহানবী (স.) হযরত আবু জাফরের নেতৃত্বে একদল অনুসারীকে (সাহাবী) আবী সিনিয়ায় হিজরতের পরামর্শ দেন। নবুওয়াতের ষষ্ঠ বছর থেকে নবম বছর পর্যন্ত (৬১৬-৬১৮) প্রায় তিন বছর কাল মক্কার কুরাইশরা হাশেমী শাখার লোক তথা মহানবী (স.) সহ সাহাবীগণকে শিয়াবে আবী তালিব নামক স্থানে আবদ্ধ করে রাখে এবং সর্বতোভাবে বয়কট করে। তিন বছর পরে বয়কট অবসানের পর মহানবী (স.) তায়েফে হিজরত করেন। নবুওয়াতের অষ্টম বর্ষে মহানবী (স.) এর চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী খাদীজার ইন্তিকালের প্রেক্ষিতে তিনি আবার কুরাইশদের প্রবল চাপের মুখে পড়েন। ৬২০ সালে মাতুলালয় মদীনাবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। করেন। ৬২১ সালে ১২ জন এবং ৬২২ সালে ৭৫ জন তীর্থযাত্রী মক্কায় এসে মহানनी (স.) এর সঙ্গে আকাবা নামক স্থানে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করে এবং মহানবী (স.) কে মদীনায় আশ্রয় প্রদানের নিশ্চয়তাসহ আমন্ত্রণ জানায়। কোনভাবেই তাঁকে ইসলাম প্রচারে নিবৃত করা সম্ভব না হওয়ায় অবশেষে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। মহানবী (স.) আমানত বুঝে দেওয়ার জন্য হযরত আলী (রা:) কে দায়িত্ব দিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে (৬২২ খ্রি:) মদিনায় হিজরত করেন।

মদীনার বিবাদমান গোত্রসমূহ ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের নিয়ে মহানবী (স.) একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন যা মদীনা সনদ নামে প্রসিদ্ধ। শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের জন্য একটি সমৃদ্ধ নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই চুক্তিকে প্রাচীন ঐতিহাসিক সংবিধান বলা হয়। এই নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ছিলেন মহানবী (স)।

হিজরী দ্বিতীয় বর্ষে মহানবী (স) এর কর্তৃত্ব খর্ব করে ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার জন্য মক্কার কাফেরেরা অর্থ-সম্পদ সংগ্রহের নিমিত্তে সিরিয়ায় বানিজ্য কাফেলা প্রেরণ করেন। এই সংবাদ অবগত হয়ে মদীনার মুসলমানেরা বাণিজ্য কাফেলার পথ প্রতিরোধ করে। এতে আবু জাহলের নেতৃত্বে ১০০০ সৈন্যের একটি সুসজ্জিত দল মদীনা আক্রমণের জন্য বদর প্রান্তরে সমবেত হয়। মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্র মুসলিম বাহিনী নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করেন। কাফের বাহিনীর ৭০ জন নিহত ও সমসংখ্যক বন্দী হয় এবং প্রচুর ‘সমরাস্ত্র ও সম্পদ’ মুসলমানদের হস্তগত হয়। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের ব্যাপক প্রভাবে সমগ্র আরবে ইসলামের সুবাতাস প্রবাহিত হয়।
এই যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্যে হিজরতের তৃতীয় বর্ষে (৬২৫ খ্রি:) আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩০০০ সৈন্য উহুদ প্রান্তরে সমবেত হয়। মহানবী (স) এক হাজার মুসলিম বাহিনী নিয়ে তাদের মোকাবেলা করেন। এই যুদ্ধে কোন পক্ষেরই নিরঙ্কুশ বিজয় বা পরাজয় হয়নি। তবে মহানবী (স) দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।

হিজরী পঞ্চম বর্ষে (৬২৭খ্রীঃ) আবু সুফিয়ান দশ হাজার সৈন্যের এক বিশাল সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য মহানবী (সাঃ) মদীনার নিকটস্থ মরুদ্দ্যানের চারপাশে পরিখা খনন করেন। প্রায় মাসব্যাপী অবরোধের পর কাফের শিবিরে খাদ্যভাব ও একরাতে ঝড় বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ায় আবু সুফিয়ানদের বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মহানবীর (স) সমর কৌশল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
মহানবী (সাঃ) একরাতে মক্কায় হজ পালনের স্বপ্ন দেখেন। হিজরী ষষ্ঠ বর্ষে (৬২৮ খ্রি:) একহাজার ছয়শত অনুসারী নিয়ে মক্কার পথে হুদায়বিয়া নামক স্থানে উপনীত হন। মক্কার কাফেরেরা মহানবী (স) এর সঙ্গে এ বছর হজ্জ পালন না করে পরবর্তী বছর হজ্জ পালনের শর্তসহ কতিপয় চুক্তি সম্পাদন করে যা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধি বাহ্যত মুসলমানদের জন্য অপমানজনক পরাজয় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল সুস্পষ্ট বিজয়। এই সন্ধির ফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে ইসলামের বিস্তৃতি ব্যাপকতা লাভ করে। মাত্র দু বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। মক্কার মুসলমানদের উপর কাফেরদের নির্যাতন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে হুদায়বিয়া সন্ধি অকার্যকর হয়ে পড়ে। হিজরী অষ্টম বর্ষে মহানবী (স) দশ হাজার সৈন্য ও সাহাবী সমভিব্যাহারে মক্কার উপকণ্ঠে তাবু ফেলেন এবং বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। মহানবী (স) যাদের অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রে অতিষ্ট হয়ে মক্কা ত্যাগ করেছিলেন সেই মক্কাবাসীর প্রতি বিজয় লগ্নে কোন প্রকার প্রতিশোধ গ্রহণ না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন যা ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। যদিও বলা হয় মহানবী (সা:) ইসলামের নামে অসংখ্য যুদ্ধ করেছেন প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ তাঁর বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ও তাঁর অনুসারীগণ আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করেছেন মাত্র। তাঁর যুদ্ধনীতি ও প্রতিশোধ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উদার ক্ষমার নীতি সে কথাই প্রমাণ করে। মক্কা বিজয়ের পর কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি। বরং কাবা গৃহ দেব-দেবী মুক্ত করে হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর একাত্ববাদ ও ‘দীনে হানীফ’ তথা ইসলামের প্রতি সবাইকে আহবান জানিয়ে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে দশম হিজরীতে (৬৩২ খ্রি:) জীবনের শেষ হজ্জ পালনে এসে আরাফাত ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তা বিদায় হজ্জের ভাষণ নামে পরিচিত। * এই ভাষণে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, জান-মাল ও সম্পদের নিরাপত্তা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, আমানতের খিয়ানত না করা, সুদ, জুয়া ও মদ পরিহার করা, দাস-দাসীর প্রতি শিষ্ঠাচার, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি অধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা ছিল যা একটি আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এই বিচারে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান যেখানে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক ও কুটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি এক কথায় মানব জীবনের সকল দিক অন্তর্ভুক্ত।

 

ঈমান
ইসলাম ধর্ম এর মূল বিষয় হল ঈমান। ঈমান ব্যাতিরেকে মুমিন হওয়া যায় না। আর মুমিন না হলে পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়া যায় না। ইসলামের মৌলিক বিষয় সমূহে সর্বান্তকরণে বিশ্বাস মৌখিক ভাবে তার স্বীকৃতি এবং কর্মের মধ্যে দিয়ে তার বাস্তবায়ন করাই হল ঈমান। আল কুরআনে উল্লেখ আছে وليس البر أن تولوا وجوهكم قبل المشرق والمغرب ولكن البر من آمن بالله واليوم الآخر والملائكة والكتاب والنّبيين

শুধু পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে এটা কল্যাণকর কাজ নয় বরং কল্যাণকর কাজ হল। যে ব্যক্তি ঈমান রাখে আল্লাহতে, পরকালে, ফিরিশতায়, কিতাবে ও নবীগণের উপরে।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে হাদীসে জীবরাইল নামক বিখ্যাত হাদীসে বিষয়টি বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে, (জীবরাইল আ:) বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে كله জ্ঞান দিন, (নবী স:) বললেন, আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতা, তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রাসূল সমূহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং ভাগ্যের ভাল ও মন্দের প্রতি ঈমান রাখা। জিবরাইল (আ:) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন।

এতে ঈমানের ছয়টি বিষয় পরিস্ফুটিত হয়।

১। তাওহীদঃ তাওহীদ হল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস। আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তাঁর কর্তৃত্বে, গুণে ও ইবাদত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি কারও ঔরশজাত নন, আবার তাঁর ঔরশে কারো জন্মও হয়নি। তাঁর কোন শরীক নেই। এই তাওহীদ তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ৷

(ক) তাওহীদ ফী রূবুবিয়াহ: প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বে অর্থাৎ যাবতীয় কর্মে আল্লাহর একক কর্তৃত্ব স্বীকার করা।

(খ) তাওহীদ ফীল আসমা ওয়াসসিফাত: আল-কুরআনে উল্লেখ আছে,আল্লাহর জন্য সুন্দর নাম আছে সেই নামে তাকে ডাকো।’ কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর জন্য যে গুণবাচক নাম রয়েছে সে বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা।

(গ) তাওহীদ ফীল উলূহিয়াহ: ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট মাথা নত করা যাবে না। কোন নৈবেদ্য ও অর্ঘ্য দেওয়া যাবে না।

২। ফিরিশতাঃ ফিরিশতা মণ্ডলী আল্লাহর এক অনবদ্য নূরের সৃষ্টি। যদিও তাঁরা মনুষ্য দৃষ্টি শক্তির বাইরে। তথাপি তাঁরা আকৃতি ধারণ ও পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। তাঁদের লিঙ্গ পরিচয় নেই। তাঁরা যাবতীয় ইন্দ্রীয় পরিতৃপ্তির উর্ধ্বে। সদা আল্লাহর নির্দেশ পালনে তৎপর।
৩। নবী-রাসূল: আল্লাহ তা’আলা আদম (আ:) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত এক লক্ষ মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী বা রাসূল করেছিলেন। আল্লাহ কর্তৃক বান্দার সঙ্গে দূতওয়ালী করার জন্য আল্লাহ মনোনীত কিছু মহাপুরুষকে বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহর প্রেরিত পুরুষদের নিকট বাণী প্রেরণ করতেন তারা তা জনগণের জন্য প্রচার করতেন। আল্লাহ প্রত্যেক কওমের নিকট সতর্ককারী নবী-রসূল প্রেরণ করেছিলেন।

৪।গ্রন্থসমূহ: আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির হেদায়েতের জন্য ওহীর মাধ্যমে ১০৪ খানা গ্রন্থ ও সহীফা প্রেরণ করেছিলেন। ১০০ সহীফা ও ৪টি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। ক) ‘তাওরাত’ মূসা (আঃ)-এর উপর যাবুর দাউদ (আ:) এর উপর ‘ইঞ্জিল’ ঈসা (আ:) এর উপর এবং খ) ‘আল-কুরআন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
৫। আখিরাত: দুনিয়ার পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়। এই জীবনের কয়েকটি পর্ব রয়েছে যেমন কবর জীবন, পুন:রুত্থান, হাশর, হাউযে কাউসার, মীযান, শাফায়াত, সিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম।

৬। কবর: মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত জীবনকে (কবরস্থ, সলীল সমাধী অথবা মমী অথবা কংকাল যে অবস্থায় থাকুক না কেন) আলমে বরযাখ বা কবরীজীবন বলা হয়। নেককারগণ কবরে নেয়ামতরাজী ও বদকারগণ আযাব ভোগ করবে এই বিশ্বাস পোষণ করা।

৭। পুন:রুত্থান: কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের পর মৃতদেরকে নতুন জীবন দান পূর্বক উঠানোকে বা‘আস বা পুনরুত্থান বলা হয়।” অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুন:জীবিত করেছি যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’

৮। হাশরঃ পুনরুত্থানের পর মানব জাতিকে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে। সে দিনের অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে নারী-পুরুষ কেউ কারো প্রতি তাকাবেনা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ হিসাব প্রদানের শংকায় গলদঘর্ম হবে, আমি তাদের প্রত্যেককে একত্র করব। অতঃপরতাদের কাউকেই ছাড়বো না।’
৯। হাউযে কাউসার: এমন এক সুপেয় পানির আঁধার যা হাশরের মাঠে মহানবী (সঃ) কে দান করা হবে যেখানে তিনি ও তাঁর উম্মতগণ অবতরণ করবেন। হাউয়ের এক এক পাশের দৈর্ঘ্য হলো (জান্নাতের পথের সমান) এক মাসের পথ। জান্নাত থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের দু’টি পাইপের মাধ্যমে হাউযে পানি সরবরাহ করা হয়। পান পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজীর ন্যায়। হাশরের ময়দানে কঠিন অবস্থায় এই হাউযে কাওসারের পানি। একবার পান করবে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত তার আর কোন পিপাসা লাগবেনা।

১০। মীযান: মানুষের ভাল মন্দ আমল পরিমাপের জন্য ন্যায়দণ্ড স্থাপন করা হবে।।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, وتضع الموازين القسط ليوم القيامة فلا تظلم نفس شيئا وإن كان مثقال حبة من خردل أثينا

كا وكفى بنا حاسبين 

আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায় তুল্যদণ্ড স্থাপন করব, ফলে কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।

১১। শাফাআত: বিচারের এজলাসে যাদের ন্যায়ের পাল্লা হালকা হবে তাদের জন্য অনুমোদিত সুপারিশকারীদের (ফিরিশতা, নবী-রাসূল, বিশেষ মুমিন বান্দা) সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, যাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না।’ আর এই সুপারিশ করা হবে তাদের জন্য যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট অথচ অল্পের জন্য তাঁরা ফলপ্রসূ হননি। আল্লাহর বাণী: ২৫ ২৫০, তারা সুপারিশ করে শুধু তাঁদের জন্য যাঁদের প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট।’

১২। সিরাত: এমন শুরু ও পিচ্ছিল দুর্গম পথ যা অতিক্রম করা আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়। নেককার বান্দারা আল্লাহর অনুগ্রহে মূহুর্তের মধ্যে এই পথ অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু পাপীরা ছিটকে জাহান্নামে গিয়ে পড়বে। আল্লাহ তা’আলা বলেন “ আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, এটা আপনার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। অতঃপর আমি মুত্তাকীদেরকে পরিত্রাণ দিব এবং অত্যাচারীদেরকে সেখানে নতযানু অবস্থায় রেখে দিব।
১৩। জান্নাত: আল্লাহ তা’আলা নেককারদের জন্য জান্নাত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। জান্নাতের আটটি বিভাগ রয়েছে এবং প্রত্যেক বিভাগে প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশ দ্বার আছে। নবী (স) বলেন في الجنة ثمانية أبواب فيها باب يسمى الريان لايدخله الا الصائمون ‘জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়্যান, রোজাদার ব্যতীত অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা।

১৪। জাহান্নাম: কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের চিরস্থায়ী আবাসস্থল, মহাঅগ্নিকুণ্ড। তবে গুনাহগার বান্দারা এখানে নির্দিষ্ট সময় অবস্থানের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। জাহান্নামের সাতটি বিভাগ আছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তার সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য বিভাজিত দল আছে।’

১৫। তাকদীর: তাকদীর শব্দটি কদর থেকে নির্গত। অর্থ সম্মান, মর্যাদা, পরিমাণ। এটি কুদরত অর্থেরও ব্যাঞ্জক। কুদরত অর্থ শক্তি সামর্থ। মানুষ কোন বিষয়ে কাঙ্খিত সফলতার জন্য তার কুদরতকে প্রয়োগ করবে এবং যেখানে গিয়ে তার শক্তি সামর্থ থেমে যায় সেখানে তার কদর বা মর্যাদা নির্দিষ্ট হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টিজগতে যা ঘটবে তা অবগত আছেন। কাজেই সেই দৃষ্টিকোন থেকে আল্লাহর নিকট তাকদীর স্থিরকৃত। কিন্তু বান্দার নিকট তাকদীর অজ্ঞাত। বান্দা কেবল প্রচেষ্টা চালাবে, পরিণতি আল্লাহর হাতে।

 

ইসলাম ধর্ম এর রুকন বা স্তম্ভসমূহ
ইসলাম ধর্ম এ মূল পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত।
১) আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল এই মর্মে স্বাক্ষ্য দেওয়া
২) সালাত কায়েম করা
৩) যাকাত প্রদান করা
৪) রমাদানের সওম পালন করা এবং
৫) আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা।

এগুলো অবশ্য পালনীয় বা ফরজ। এর কোনটি অস্বীকার করলে সে মুসলিম বিবেচিত হবে না।

১) শাহাদত বা স্বাক্ষ্য প্রদান
প্রথমত: আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য বা মাবুদ নেই। তিনি সর্বময় কর্তা। একমাত্র তিনিই উপাসনার যোগ্য, অন্য কারো উপাসনা বা ইবাদত করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত: মুহম্মদ (সঃ) তাঁর রাসুল (প্রেরিত মহাপুরুষ) এই স্বাক্ষ্যের উদ্দেশ্য হলো, তিনি অনুসরণীয় অনুপম আদর্শ। তিনি যা নিয়ে এসেছেন, করেছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা এবং তিনি যা পরিহার করেছেন ও নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।

২) সালাত কায়েম করা
সালাত প্রাত্যহিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে দৈনিক পাঁচবার বান্দা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করে ও প্রণতি জানায়।

১) সুর্য্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত,

২) দ্বিপ্রহরের পরে কোন বস্তুর ছায়া মূল ছায়া ব্যতীত দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সালাত,

৩) জোহরের শেষ সময়ের পরে সুর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাত,

৪) সুর্যাস্তের পর পরই মাগরিবের সালাত এবং

৫) সূর্যাস্তের দেড়ঘণ্টা পর মাঝরাত্রি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঈশার সালাত আদায় করতে হয়।

৩) যাকাত প্রদান করা
সমাজের সামর্থবান লোকদের উপর যাকাত আবশ্যক হয়। নেছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর সঞ্চিত থাকলে তার উপর ২% % যাকাত আবশ্যক। স্বর্ণ ৭/২% ভরি, রৌপ্য ৫২ ভরি, ব্যবসায়ের পণ্য অথবা সমমূল্যের নগদ অর্থ থাকলে ২/২% যাকাত দিতে হয়। এমনকি চারণভূমিতে পালিত পশুর যাকাত, উৎপন্ন ফসলের উপর ১/১০ অংশ, ভূগর্ভস্থ খনিজ বা সামদ্রিক তলদেশে প্রাপ্ত সম্পদেরও / অংশ প্রদান বাধ্যতামূলক।” যাকাতের প্রাপকগণ ১) ফকীর, ২) মিসকীন, ৩) যাকাত আদায়কারী কর্মচারী ৪) বিধর্মীদের অন্তর পরিবর্তনের জন্য ৫) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, ৬) দাসমুক্তি, ৭) আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ, জনক্যাণমূলক কাজ) এবং ৮) পথশিশু বা পথিক।

৪) রমাদান মাসের সিয়াম পালন
আরবী ১২টি মাসের মধ্যে রমাদান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসে যাবতীয় আসমানী গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ হয়েছে। আল-কুরআনও এ মাসের লাইলাতুল কদরে মহিমান্বিত রজনীতে অবতীর্ণ হয়েছে। এই মাসের সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম সপ্তম বা উপবাস। সত্তম মাসব্যাপী বৈধ বস্তু থেকে নির্দিষ্ট সময় বিরত থাকার পাশাপাশি যাবতীয় অবৈধ কথা, কাজ, দর্শন ও চিন্তা থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ দেয়। অর্থাৎ একজন সিয়াম পালনকারীদেরকে পূত, পবিত্র ও মুত্তাকী করে তোলে।

৫) আল্লাহর ঘর হজ্জ করা
সামর্থবান মুসলিম ব্যক্তিকে অন্তত: জীবনে একবার আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ হজ্জ করা আবশ্যক। হজ্জ তিন প্রকারঃ

  1. এফরাদ,
  2. তামাত্তু ও
  3. ক্বেরান।

১। এফরাদ হজ্জ: শুধু হজ্জের নিয়তে ইহরাম পরিধান করে হজ্জ সম্পন্ন করাকে এফরাদ হজ্জ বলে।

২। তামাত্তু হজ্জ: ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম পরিধান করে ওমরাহ সম্পূর্ণ করার পর ইহরাম খুলে হজ্জের সময় পুনরায় ইহরাম পরিধান করে হজ্জ সম্পন্ন করা।

৩। কেরান হজ্জ: একই ইহরাম পরিধান করে ওমরাহ ও হজ্জ সম্পন্ন করা। মাঝখানে ইহরাম খুলে হালাল না হওয়া।

হজ্জের নিয়ম: জিলহজ্জ মাসের আট তারিখে মীনায় গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে নয়ই জিলহজ্জ ফজরের পর আরাফার ময়দানে গমন। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফায় গিয়ে রাত্রি যাপনের পর দশই জিলহজ্জ মিনায় গিয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা। অতঃপর কুরবানী করে মাথামুণ্ডন করা ও হালাল হওয়া। এগারো ও বারোই জিলহজ্জ জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা এবং বারই জিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করে মাক্কায় গমন করা। এই তিন দিনের কোন এক সময় বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা ও সায়ী করা। অতঃপর বিদায়ী তওয়াফ ও সায়ী করে মক্কা ত্যাগ করা।

ইহসান
ইহসান ইসলাম ধর্ম এর বাহ্যিক রূপ যেমন ঈমান ইসলামের অভ্যন্তরীণ রূপ। ইসলাম ধর্ম  হল ঈমান আর দেহ হল ইহসান। স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি যে সব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা সর্বোত্তম রূপে সম্পন্ন করাই ইহসান। অর্থাৎ ইহসান হলো ইসলামের সামগ্রিক প্রতীক। গভীর মনোনিবেশ সহকারে নিখুঁত ভাবে হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর ইবাদত করা এবং যথাযথভাবে খিদমতে খালক বা সৃষ্টির সেবা করাই ইহসান।

ইহসান দু’প্রকার
১. স্রষ্টার ইবাদতে ইহসান
২. সৃষ্টির প্রতি ইহসান

স্রষ্টার ইবাদতে ইহসান
সুমহান আল্লাহ তা’আলার পরিপূর্ণ ঈমানসহ নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে বিনয় ও নম্রতার সাথে আদিষ্ট নিদ্দিষ্ট ইবাদত করার নাম স্রষ্টার ইবাদতে ইহসান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারা তো এই মর্মে আদিষ্ট হয়েছে যে যাবতীয় উপাস্য থেকে বিমুখ হয়ে। একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে।”। মহানবী (স) এর হাদীসে উল্লেখ আছে, “এমনভাবে তারা আল্লাহর ইবাদত করবে যেন সে আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে, যদি সে আল্লাহকে নাও দেখতে পায় তবে সে যেন মনে করে আল্লাহ তাকে দেখছে। ”

সৃষ্টির প্রতি ইহসান
মানুষ থেকে শুরু করে যাবতীয় পশু-পাখি প্রাণী উদ্ভিদ ও জড় এক কথায় আল্লাহর সমগ্র। সৃষ্টির প্রতি মানুষের ভালবাসা, সৎব্যবহার ও উপকার সাধনই হল সৃষ্টির প্রতি ইহসান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তুমি অপরাপরের উপর ইহসান কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি ইহসান করেছেন।

ইসলামের উৎসবসমূহ
ইসলাম ধর্ম এর যে সব ধর্মানুষ্ঠান বা উৎসব রয়েছে তন্মধ্যে

  1. ঈদুল ফিতর,
  2. ঈদুল আযহা,
  3. মহরম,
  4. শবে মেরাজ,
  5. শবে বরাত ও
  6. শবে কদর উল্লেখযোগ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *