ইবনে তাইমিয়া

ইবনে তাইমিয়া

 ইবনে তাইমিয়া

তাকীউদ্দীন আবূ আব্বাস আহমদ ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে তাইমিয়া আল-হাররানী আল-হাম্বলী (১২৬২-১৩২৮ খ্রি.) ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত মুজাদ্দিদ বা যুগস্রষ্টা সংস্কারক। ইবনে তাইমিয়ার চিন্তা ও কাজের প্রভাব তেরো ও চৌদ্দ শতকের তাঁর সময়কে অতিক্রম করে দুনিয়ার জ্ঞানের পরিসরকে আজো আলোকিত করে চলেছে। বর্তমান বিশ্ব যে অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য অ্যাডাম স্মীথের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। অনেকের মতে অ্যাডাম স্মীথের পাঁচশ’ বছর পূর্বেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া সে সম্পর্কে ধারণা পেশ করেছেন।

ইবনে তাইমিয়া এর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সমাজ। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বই। সব ফিল ইসলাম’। এ গ্রন্থে তিনি চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন, দাম ও ন্যায্য দাম, বাজার তদারকী, সরকারী অর্থব্যবস্থা, জনগণের প্রয়োজন পূরণে সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা করেছেন।

 

তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এবং জবাবদিহির অনুভূতিহীন জাগতিক কাজকর্মে লিও ব্যক্তিদের নিন্দা করেছেন। সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করার উপায় হিসেবে তিনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সীমানা চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে, একটি সমাজ নিয়মের মধ্যে চললে সেখানে অনৈতিক কাজ বন্ধ হবে।

 

ইবনে তাইমিয়া অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পূর্ণ স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত সম্পদ নৈতিকভাবে ব্যবহারের তাকীদ দিয়েছেন। তিনি লেনদেনের সকল চুক্তি ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে সম্পাদনের পরামর্শ দেন। চুক্তিবদ্ধ অংশীদারগণ স্বেচ্ছায় সব শর্ত মেনে চলবেন। এ ক্ষেত্রে কোন রকম জোর- যুলুম বা জবরদস্তি থাকবে না। এরূপ নীতি মেনে চললেই বাজারদর ন্যায্য হবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। ন্যায্য বাজার-দামের ওপর ইবনে তাইমিয়াই প্রথম বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের অংশীদারিত্ব সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।

 

অর্থনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে ইমাম ইবনে তাইমিয়া এর দৃষ্টিভঙ্গির কয়েকটি বিষয় :

১. নাগরিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। বায়তুল মাল হতেই এই উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ ছাড়া বেকারত্ব দূর হবে না। এজন্য সরকারকে কর্মসূচী নিতে হবে।

 

২. রাষ্ট্র যাকাত আদায় করবে। আদায়কৃত যাকাত এবং কর ও শুল্ক থেকে জনগণের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে সরকার ধনীদের ওপর আরো কর আরোপ করবে। তাতেও ব্যয় সংকুলান না হলে তাদের কাছ থেকে ঋণ নেবে। তারপরও ঘাটতি থেকে গেলে ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে। সূরা আল-জারিয়ার ১৯তম আয়াতে আল্লাহ তাআলা সরকারকে এই অধিকার দিয়েছেন।

 

৩. রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারবে কি-না, কোন্ অবস্থায় কতটুকু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তার সীমা সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন।

 

৪. বাজার তদারকি তথা ভোক্তার জন্য মূল্যনিয়ন্ত্রণ এবং সেইসাথে ব্যবসায়ীর ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । বাজারে ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতা বজায় রাখার দায়িত্বও সরকারের। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে মূল্যনিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মুনাফাখোরী বন্ধ করতে হবে। সেইসাথে ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মুনাফার দিকেও নঘর রাখতে হবে।

৫. বিশেষ অবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ব্যক্তির কোন কোন অধিকার বাতিল করারও এখতিয়ার রাখে।

 

৬. প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘আল-হিসবাহ’র ধারণা অর্থনীতির ইতিহাসে ইবনে তাইমিয়া এর মৌলিক চিন্তার ফসল। একচেটিয়া কারবার, মজুদদারী, মুনাফাখোরী, ফটকাবাজারী, ওজনে কারচুপি প্রভৃতি জনস্বার্থবিরোধী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ‘আল-হিসবাহ’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। “আল হিসবাহ’ প্রতিষ্ঠান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে অপরিহার্য। দ্রব্যসামগ্রীর যোগান নিশ্চিত করবে, শিল্প, ব্যবসা ও অন্যান্য দেবা তদারকি করবে, দ্রব্যের মান ও পরিমাপ যাচাই করবে এবং মজুদদারী, মুনাফাখোরী, জুয়া ও সুদের কারবারসহ অর্থনৈতিক অপরাধসমূহ। দমন করবে।

 

৭. ইবনে তাইমিয়া সম্পদের মালিকানার ধারণা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

 

আরো জানুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *