?> ইসলামি ব্যাংক এর পরিচয় - Best Information
ইসলামি ব্যাংক

ইসলামি ব্যাংক এর পরিচয়

ইসলামি ব্যাংক এর পরিচয়

ইসলামি ব্যাংক এর সংজ্ঞা

“ইসলামি ব্যাংক’ এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ইসলামের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতিমালার বাস্তবায়ন করা। ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC) ইসলামী ব্যাংকের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছে:

Islami Bank is a financial institution whose statutes, rules and procedures expressly state its commitment to the principles of Islamic shariah and to the banning of the receipt and payment of interest on any of its operations.’

অর্থাৎ ইসলামি ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা তার উদ্দেশ্য, মূলনীতি এবং কর্মপদ্ধতির সকল স্তরে ইসলামী শরীয়াহর সকল নীতিমালা মেনে চলে এবং তার সকল কার্যক্রমে সুদের লেনদেন সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে। মালয়েশিয়ার ইসলামি ব্যাংক আইন ১৯৮৩ অনুসারে ইসলামি ব্যাংক এর সংজ্ঞা :

 

‘Islamic Bank is a company which carries on Islamic Banking business… Islamic Banking business means banking business whose aims and operations do not involve any element which is not approved by the religion Islam.”

 

অর্থাৎ “ইসলামী ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি কোম্পানি যা ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত; ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসা হচ্ছে এমন এক ধরনের ব্যবসা যার লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের কোথাও এমন কোন উপাদান নেই যা ইসলাম অনুমোদন করেনি।

 

International Association of Islamic Banks তাদের সংজ্ঞায় বলেছে:

The Islamic Bank basically implements a new banking concept, in that it adheres strictly to the ruling of the Islamic Shariah in the fields of finance and other dealings.

Moreover, the bank which is functioning in this w reflect Islamic principles in real life. The bank should work towards the establishment of an Islamic Society hence, one of its primary goals is the deepening of the religious spirit among the people. way must

 

অর্থাৎ ‘ইসলামি ব্যাংক মূলত একটি নতুন ধারণাকে বাস্তবে রূপ নেয়, যাতে তা ফাইন্যান্স এবং অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ইসলামী বিধিবিধান কঠোরভাবে মেনে চলে। অধিকন্তু, ইসলামি ব্যাংক এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বাস্তব জীবনে ইসলামী বিধিবিধানকে অবশ্যই প্রতিবিম্বিত করবে। ব্যাংককে একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করার লক্ষে কাজ করা উচিত এবং সে জন্য এর অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জনগণের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা গভীরভাবে প্রোথিত করা।

 

ডক্টর শাওকী ইসমাঈল সাহতা ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে বলেন ? ‘It is therefore,… imperative for an Islamic bank to incorporate in its functions and practices commercial investment and social activities, as an institution designed to promote the civilized mission of an Islamic economy.”

 

অর্থাৎ “কাজেই ইসলামি ব্যাংক এর কার্যক্রম ও প্রয়োগ রীতিতে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ এবং সামাজিক কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরি, যেন এটি (ইসলামি ব্যাংক) ইসলামী অর্থনীতির সুশীল লক্ষ্য বাস্তবায়নের একটি প্রতিষ্ঠান রূপে কাজ করতে পারে।”

 

ডক্টর জিয়াউদ্দীন আহমদ-এর মতে:

‘Islamic banking is essentially a normative concept and could be defined as conduct of banking in consonance with the ethos of the value system of Islam.’

অর্থাৎ “ইসলামী ব্যাংকিং হলো একটি নীতিগত ধারণা এবং এটিকে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকিং হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।”

 

উপরের সংজ্ঞাসমূহ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলামী ব্যাংকিং আর্থিক মধ্যস্থতার এমন একটি পদ্ধতি যা তার লেনদেনে সুদ গ্রহণ ও প্রদান করে না এবং এর কার্যাবলী এমনভাবে পরিচালনা করে যাতে ইসলামী অর্থনীতির উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হয়। এটি এমন এক ব্যাংকিং পদ্ধতি যা লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামী নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এই লেনদেনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো লাভ- লোকসানে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনীতিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

২. সামী ব্যাংকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রধান দুটি দিক থেকে ইসলামি ব্যাংক এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। প্রথমত পবিত্র কুরআনে ব্যবসাকে ‘হালাল’ আর সুদকে ‘হারাম’ ঘোষণা করেছেন। কোন মুসলমান একথা জানার পর তার পক্ষে লেনদেনের সাথে জড়িত থাকা ঈমানের পরিপন্থী। মিথ্যা বলা যেমন হারাম, শুকরের গোশত খাওয়া যেমন হারাম, খুন-জখম যেমন হারাম, সুদ তেমনি হারাম। সুতরাং সুদভিত্তিক লেনদেনের বিকল্প হিসেবে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা একটি ঈমানী দায়িত্বের প্রতিফলন।

দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয় হলো সুদভিত্তিক ব্যাংকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি। সুদনির্ভর প্রতিষ্ঠান সুদের মাধ্যমে সমাজের মানুষকে শোষণ করে। সুদের কারণে ব্যবসায়ীর নৈতিকতা নষ্ট হয়। পণ্যের ওপর সুদের বাড়তি মূল্য যোগ হওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমে যায়। এ সকল অব্যবস্থার মুকাবিলায় ইসলামি ব্যাংক এর গুরুত্ব অপরিসীম।

 

ইসলামি ব্যাংক এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলামের আর্থ-সামাজিক মূলনীতির আলোকে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার তাকীদ থেকে ইসলামী ব্যাংকিং চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। প্রচলিত ধারার ব্যাংক-ব্যবস্থার সাথে এ ব্যাংকের পার্থক্য নীতিগত। এ ব্যাংকের কর্মধারাও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ইসলামী শরীয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকের সকল লেনদেন সুদমুক্ত। ন্যায়ানুগ মুনাফা এ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের ভিত্তি। আর্থ-সামাজিক সুবিচার কায়েম এ ব্যাংকের উদ্দেশ্য।

 

ইসলামি ব্যাংক অর্থনীতি, আর্থিক লেনদেন ও সম্পদ বণ্টনে এবং ব্যবসা- বাণিজ্য ও শিল্পে বৈষম্য দূরীকরণ, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা এবং আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসলামী ব্যাংকসমূহ ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী লাভ-লোকসানে অংশগ্রহণ এবং ইসলামে অনুমোদিত অন্যান্য পদ্ধতিতে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামি ব্যাংক সমূহ সুদকে সর্বতোভাবে পরিহার করে, যা সকল শোষণের

 

উৎস এবং ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের জন্য দায়ী । ইসলামি ব্যাংক তার নীতি, কর্মসূচী ও কর্মধারার মাধ্যমে যেসব মৌলিক আর্থ- সামাজিক লক্ষ্য হাসিল করতে চায়

 

১. সম্পদের ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যায়, অবিচার, যুলুম, শোষণ ও বৈষম্য দূর করা।

২.অর্থনীতিতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ও লেনদেনের অন্য সব ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনয়ন।

৩.মানব সম্পদ ও বস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ, তাদের দুঃখ মোচন ও জীবন- উন্নয়ন ।

৪.সুদের সর্বনাশা কুফল থেকে মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে মুক্ত করা এবং আয়ের উৎস হিসেবে শ্রমের মর্যাদা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা।

৫. ব্যাংক ব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক ভাবধারার মূলোৎপাটন করে ব্যষ্টিক সামষ্টিক কল্যাণের আদর্শ কায়েম।

 

ইসলামি ব্যাংক এর কর্মনীতি

১. শরীয়াহ্ মুতাবেক সকল কাজ পরিচালনা করা।

২. আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে সুদমুক্ত করা ।

৩. ব্যাংকিং কার্যক্রমকে জনকল্যাণের লক্ষ্যে পরিচালিত করা।

৪. বিনিয়োগ কার্যক্রমে ইসলামী নীতির অনুসরণ করার কারণে কেবলমাত্র মুনাফাকে অগ্রাধিকার দানের পরিবর্তে সমাজের সাধারণ চাহিদার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিনিয়োগ খাতের অগ্রাধিকার নিরূপণ করা।

৫. ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ন্যায়নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

৬. স্বল্প আয়ের লোকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

৭. মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

৮. অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

৯. ইসলামী অর্থব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *