আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য

আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য

আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য: আল-কুরআনের রচনাশৈলী ও বিষয়বিন্যাস স্বতন্ত্র। এর প্রকাশরীতি, ব্যঞ্জনা, অভিব্যক্তি ও আবেদন অনুপম। এর ভাষা অনুকরণীয়। এ মহাগ্রন্থ বিষয়ভিত্তিক ধ্যান-ধারণায় বিরচিত নয়। স্বকীয় উপস্থাপনা ও বিষয় বৈচিত্র্যের কারণে আল-কুরআন অনবদ্য বিশিষ্টতা পেয়েছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। মানুষের জীবনের সব দিক ও বিভাগের প্রয়োজনীয় বিধান এ গ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَبَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ

“আমি আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি। তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, সুপথের নির্দেশনা, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।” [সূরা নাহল : ৮৯] অন্যত্র আরো স্পষ্ট করে বলেছেন,

مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَبِ مِنْ شَيْءٍ

“ এ কিতাবে আমি কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করা বাকি রাখিনি।” [সূরা আনআম : ৩৮] আল-কুরআন একটি ত্রুটিহীন গ্রন্থ। এটি মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَبٍ مَّكْنُونٍ لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ

“নিশ্চয় এটি সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। যারা পূত-পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।” [সূরা ওয়াকিআ : ৭৭-৭৯]

আল-কুরআন চিরন্তন, অভ্রান্ত, সুনিশ্চিত ও অকাট্য গ্রন্থ। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এতে প্রমাণিত সত্য বক্তব্য রয়েছে। রয়েছে প্রামাণ্য ঐতিহাসিক তথ্য। সাহিত্যিক মানেও আল-কুরআনের কোনো তুলনা নেই। তবে এর সবচেয়ে বড় পরিচয়, এ মহাগ্রন্থখানা সব জ্ঞানের মূল উৎস। সব রকমের জাগতিক, বৈষয়িক ও ধর্মীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূলনীতি, সূত্র ও প্রেরণা এতে বিবৃত হয়েছে। ব্যাকরণ, আইন, আধ্যাত্মিকতা, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ, রসায়ন, দর্শন, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, সাহিত্য, তর্কশাস্ত্র, অলঙ্কারশাস্ত্র, ফারাইয, নসীহত, বর্ষপঞ্জিসহ জীবন ঘনিষ্ঠ সব প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মূলনীতি আল-কুরআনে রয়েছে। আল-কুরআন মানুষকে আবিষ্কার ও গবেষণায় নিরন্তর প্রেরণা দান করেছে। এতে আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শীভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এ কারণে আল-কুরআনের তিলাওয়াত ও শ্রবণ এর পাঠক বা শ্রোতাকে ক্লান্ত ও বিরক্ত করে না বরং তাদের হৃদয় শাস্তি ও তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয়। দুর্ধর্ষ কাফির উমর ইবনুল খাত্তাব হযরত মুহাম্মদ (স.) কে হত্যা করতে এসে তাঁর বোনের কন্ঠে আল- কুরআনের তিলাওয়াত শুনেই বিমোহিত ও বিগলিত হয়েছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণের জন্য সঙ্গে সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কাছে আগমন করেছিলেন।

আল-কুরআন অতীতে নাযিলকৃত সব কিতাবের সংক্ষিপ্ত সার। সব নবী-রাসূলের মূল শিক্ষা এ কিতাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মূলত আল-কুরআন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কোনো বিচ্ছিন্ন গ্রন্থ নয়। বরং এ হলো তাঁর থেকে নাযিলকৃত কিতাবসমূহের নিরবচ্ছিন্ন ধারা। নাযিলকৃত প্রথম কিতাবে আল্লাহ তা’আলা যেমন তাওহীদ, আখিরাত, দুনিয়ার হুকুম-আহকাম প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন সর্বশেষ কিতাবেও এর ব্যতিক্রম করেননি। এক ও অভিন্ন ধারায় মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য কিতাবের মতোই আল-কুরআন নাযিল করেছেন। এর মধ্যে পূর্ববর্তী কিতাবের কোনো মৌলিক শিক্ষাই বাদ পড়েনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের প্রয়োজন হতে পারে এমন সব বিষয়ই আল-কুরআনের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে মানব জাতির ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি একান্তভাবে আল-কুরআন মেনে চলা বা না চলার ওপর নির্ভরশীল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *