ইসলামী বিজ্ঞান

ইসলামী বিজ্ঞান

প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের যতগুলো শাখা রয়েছে, আদর্শনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের যতগুলো শ্রেণি আছে সবগুলোই সাধারণভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। তবে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের মধ্যে নীতিবিদ্যার দর্শন ও আদর্শ ধর্মের সঙ্গে অনেকটা সামগ্রস্যপূর্ণ। এছাড়া আর কোনো বিজ্ঞান সরাসরি কোনো ধর্মের সঙ্গে এ বিজ্ঞানগুলোর সম্পর্ক দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ইসলাম। ইসলামের সরাসরি সব বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, ভূগোল, পরিসংখ্যান, গণিত, অণুজীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সব বিজ্ঞানের উৎপত্তি, চর্চা ও বিকাশে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের বিস্তারিত নির্দেশনা বিজ্ঞানের প্রতিনিয়ত বিকাশ ও কল্যাণ ধারাকে অধিকতর সমৃদ্ধ করে চলেছে। তা সত্ত্বেও ইসলামী বিজ্ঞান বলে কোনো বিজ্ঞানকে শনাক্ত করা সঙ্গত নয়। কারণ হযরত মুহাম্মদ (স.) বিজ্ঞানের কোনো শ্রেণিবিন্যাস করেননি। জ্ঞানকে ইসলামী ও অনৈসলামী বলে আলাদা করেননি। বরং সব জ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চাকে সর্বোতভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরবর্তীকালে মুসলমানরা বিজ্ঞান চর্চা করেছেন। তর্কের খাতিরে মুসলমানদের বিজ্ঞান বলে একটি বিজ্ঞান শাস্ত্রের স্বীকৃতি দেয়া যায়, যাতে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ তাদের প্রতিভা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করেছেন। সত্যিকারার্থে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব ধারা ও চর্চার সব প্রচেষ্টাই ইসলামী। যদি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো জ্ঞান চর্চা বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আল্লাহ তা’আলার সত্তা ও তাঁর রাসূল (স.)-এর শিক্ষাবিরোধী না হয় বরং তা আল্লাহ তা’আলার অসীম ক্ষমতা, তাঁর নিরস্তর অনুগ্রহ ও তাঁর অস্তিত্বের অনুকূলে প্রমাণ বলে সাব্যস্ত হওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই সে বিজ্ঞান ইসলামী বিজ্ঞান বলে অভিহিত হবে।

সুতরাং যে বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ওপর নির্ভরশীল এবং যুক্তিনির্ভর পদ্ধতি অনুসরণ করে পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণের ভিত্তিতে যা অর্জিত জ্ঞানকে ইসলামের নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ ও জীবন দর্শনের আলোকে সুবিন্যস্ত করে, তাকে ইসলামী বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হোক বা সামাজিক বিজ্ঞান কিংবা গণিতের মতো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান- ইসলামী বিজ্ঞান হতে হলে এর লক্ষ্য থাকবে অর্জিত জ্ঞান আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব, তাঁর ক্ষমতা ও নিআমতের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করা। এ ধরনের বিজ্ঞানে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্য ব্যক্তির সুনাম বৃদ্ধি বা গবেষক হিসেবে খ্যাতি লাভ নয়। বরং একান্তভাবে আল্লাহ তা’আলার আদেশ পালনের মাধ্যমে মানবকল্যাণ সাধন করে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *