বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য

বিজ্ঞানের সংজ্ঞাসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয়, বিজ্ঞানের মধ্যে সাধারণত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকে। যেমন-

১. বিশেষ বিষয় বা ঘটনা বিজ্ঞানের প্রথম বৈশিষ্ট্য এটি বিশেষ বিষয় বা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু একটি বিশেষ শ্রেণির ঘটনাবলি। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সম্পর্কহীন ঘটনাবলি বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হতে পারে না।

২. ধারাবাহিক বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা থাকা। বিশেষ বিষয় বা ঘটনা নিয়ে কৃত আলোচনাটি ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করে। আকস্মিক, আংশিক বা খণ্ডিত আকারে কোনো জায়গা থেকে শুরু করে না। আকস্মিক বা একক কোনো ঘটনা নিয়ে বিজ্ঞান গড়ে উঠতে পারে না। বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর মধ্যে পৌনঃপুনিকতা থাকতে হবে।

৩. সর্বজনীনতা ও প্রচারযোগ্যতা : বিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সত্যের বা তত্ত্বের সর্বব্যাপকতা ও প্রচারযোগ্যতা থাকে। যে কেউ তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে, যে কেউ পরীক্ষা করতে পারে। এটি গোপন রাখা হয় না। বরং সবার কাছে প্রচার করা যায়।

৪. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট বা সর্বজনগ্রাহ্য সাধারণ সত্য বা সূত্র আবিষ্কার করা বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য। কোনো তত্ত্ব কতখানি সত্য তা নির্ভর করে কোন পদ্ধতির সাহায্যে বা কী উপায়ে সে তত্ত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে তার ওপর। এজন্য বলা হয়, বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার বিষয়বস্তু নয় বরং পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যসমূহকে কতগুলো সাধারণ সূত্রে গ্রন্থিত করা এবং পুনরায় এসব সূত্রের সত্যতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ, সূত্র আবিষ্কার এবং পুনঃপরীক্ষণ। তাই বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিশেষ বিষয় বা ঘটনা নিয়ে আলোচনায় পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্ভাবিক অবৈজ্ঞানিক বা স্বেচ্ছাচারমূলক পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের আলোচনা হয় না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণকে বোঝায় যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ সাধারণত সবার ক্ষেত্রে অভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তির পরিবর্তনের কারণে যাতে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না।

  • প্রফেসর জিলবার্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ৬টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো:
    ক. সমস্যা চিহ্নিতকরণ অর্থাৎ সমস্যাটি কী তা নির্ধারণ করা।
    খ. নির্ভুল পর্যবেক্ষণ বা প্রত্যক্ষকরণ।
    গ. তথ্যের প্রকৃতি নিরূপণ ও শ্রেণিবিভাগকরণ।
    ঘ. অনুমান গঠন।
    ঙ. পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আনুমানিক সিদ্ধাস্তের সত্যতা যাচাইকরণ এবং ভবিষ্যতে প্রয়োগের ফলাফল পূর্বসিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে কি-না তা মূল্যায়ন। প্রফেসর জিন্সবার্টের মতে, যে শাস্ত্রে এ পদ্ধতি বা স্তর পর্যায়ক্রমে ব্যবহৃত হয়ে বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয় সে শাস্ত্র বিজ্ঞানের মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী।

৫. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি : বিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, বিশেষ ঘটনা বা বিষয়ের আলোচনায় পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয়। কোনোক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটে না। বিজ্ঞান কখনো পরিপূর্ণ হতে পারে না। কারণ মানুষের জ্ঞানের পরিধি ক্রমবর্ধমান। সব জানা শেষ হয়ে গেছে বা আর কিছু জানার নেই- এ দৃষ্টিভঙ্গি বৈজ্ঞানিক নয়। প্রগতিশীলতা, অনুসন্ধিৎসা ও সন্দেহ প্রবণতা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

৬. প্রয়োগ বা ব্যবহার : বিজ্ঞানের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিষয় বিশ্লেষণের পর যে ফল লাভ হয় তা প্রয়োগযোগ্য হয়ে থাকে। প্রয়োগযোগ্য না হলে বা গবেষণালব্ধ ফল ব্যবহার উপযোগী না হলে ধরে নেয়া যায়, গবেষণার পদ্ধতিটি বা বিষয়টি বিজ্ঞান নয়। কারণ বিজ্ঞান হলে অবশ্যই তা প্রয়োগযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য হবে। যে কোনো বিজ্ঞানের যথার্থতা বা নিশ্চিত বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পেছনে থাকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের সম্ভাব্যতা। ব্যবহারযোগ্যতা না থাকলে বিজ্ঞান অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োগ বা ব্যবহারযোগ্যতা বিজ্ঞানের অন্যতম মাপকাঠি বলে গণ্য হয়।

 

আরো জানুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *