বিজ্ঞানের ইতিহাস

বিজ্ঞানের ইতিহাস

বিজ্ঞানের ইতিহাস হলো এমন ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন বা ঘটনাসমষ্টি যা যুগে যুগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিস্তার লাভ করেছে এবং যার ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা সব সময় অব্যাহত থেকেছে। মূলত বিজ্ঞান কখনো থেমে থাকেনি, বরং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মাধ্যমেই পৃথিবী এগিয়েছে এবং বিভিন্ন যুগ অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সত্যিকারার্থে বিজ্ঞানের সূচনা মানব জন্মের শুরু থেকেই। পার্থক্য হলো, সে সময় মানুষ জানত না যে সে কি করছে বা তার দ্বারা কোন সভ্যতার সূচনা ঘটতে যাচ্ছে। প্রথম যে মানুষ পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি সভ্যতার বর্তমান বিকাশ সম্পর্কে ভাবেননি। তাঁর পর অসংখ্য মানুষ পৃথিবীতে আগমন করেছে। একটি সময়ে এসে মানুষ নিজের কাজের অর্থ ও গুরুত্ব অনুসারে সেগুলোকে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। এভাবেই জন্ম নিয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এরপর বর্তমান মানুষ যে বিষয়গুলোকে বিজ্ঞান বলছে বা বিজ্ঞানসম্মত বলছে সেগুলোর ক্রমবিকাশ সাধিত হতে থাকল, যা বর্তমান পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে যে বিজ্ঞানের জয় জয়কার চলছে এর শুরু অবশ্য বেশি দিনের নয়। খ্রিস্টীয় ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে যখন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূচনা হয় তখন মানুষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞানের বিবর্তনকেও পরিচালনা ও প্রত্যক্ষ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এ ধরনের জ্ঞান এতটাই মৌলিক ছিল যে, অনেকে বিশেষত বিজ্ঞানের দার্শনিকগণ মনে করেন, এ পরিবর্তনটি প্রাক-বৈজ্ঞানিকতাকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ যখন মানব মন বিকশিত হয়নি তখনকার সময়কেও এটি অন্তর্ভুক্ত করে এবং নিগূঢ় অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে।

বিজ্ঞানের ইতিহাস বা Historiography of science হলো বিজ্ঞানের ইতিহাসের পদ্ধতি এবং ইতিহাসবিষয়ক অধ্যয়ন। সাধারণভাবে ইতিহাস লিখন বলতে ইতিহাসের পদ্ধতি ও ইতিহাস নিয়ে গবেষণাকে বোঝায়। বিজ্ঞানের ই/তি/হা/স লিখনের অধীনে বিজ্ঞানের পদ্ধতি, তত্ত্ব, বিভিন্ন দার্শনিক ধারা এবং বিজ্ঞানের ইতিহাসের জন্ম ও উন্নয়ন আলোচিত হয়। বিজ্ঞানের ই/তি/হা/স অধ্যয়নের প্রকৃত উপায় নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু থেকেই ছিল। স্বয়ং বিজ্ঞানীগণই বিজ্ঞানের জন্ম ও বিকাশবিষয়ক ঐতিহাসিক বিতর্কের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য বলা যায়, বিজ্ঞানের গতিপথবিষয়ক ঐতিহাসিক বিতর্কই প্রথম বিজ্ঞানের ইতিহাস লিখন শাখাটির জন্ম দেয়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানের দার্শনিক উইলিয়াম হিউয়েলের ঐতিহাসিক রচনাবলিকেই এ শাখায় অধ্যয়নের প্রথম উদাহরণ বলা যায়। সেক্ষেত্রে হিউয়েলই বিজ্ঞানের ইতিহাস লিখনের জনক। এর অন্যান্য জনকদের মধ্যে রয়েছেন পিয়ের দ্যুয়েম (Alexandre Koyre.)। তবে বিজ্ঞানের  ই/তি/হা/স লেখার এ শাখাটি প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে। যেমন ১৯৬৫ সালে গের্ড বুখডাল প্রথম A Revolution in Historiography of Science-এ টমাস কুন ও জোসেফ আগাসির উদ্ভাবনী বিশ্লেষণ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, এ দু’জন লেখকই প্রথম বিজ্ঞানের ই/তি/হা/স এবং বিজ্ঞানের  ইতিহাস লিখনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সূচিত করেছেন। তাদের ইতিহাসবিষয়ক চিন্তাধারা স্বয়ং বিজ্ঞানের ইতিহাসকে পর্যন্ত প্রভাবিত করেছে।

 

আরো জানুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *